বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়। গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয়

আসলামুআলাইকুম প্রিয় পাঠকগণ আপনারা জানেন যে গ্যাস খুব ভয়ংকর একটি রোগের নাম।আমাদের দেহে গ্যাস হলে বদহজম, এসিডিটি, অম্বল এবং পেটে ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেরই পেট কিন্তু আবার শুধু গ্যাসের কারণেই ফুলে থাকে। তার ফলে ভুড়ি না থাকলেও পেট অনেক মোটা দেখা যাই । তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই গ্যাস হলে কোন কোন সমস্যা দেখা দেয়, গ্যাসের সমস্যা কোথায় বেশি প্রভাব ফেলে,গ্যাসের চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়,এবং গ্যাসের ওষুধের মূল্য কত।

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ

সব মানুষেরাই গ্যাসের সমস্যা রয়েছে কারো কম অথবা কারো বেশি। চলুন আজকে আমরা জেনে নেই গ্যাসের সমস্যা হওয়ার কারণ গুলো:-

১.অনিয়মিত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।

২.কোল ড্রিংকস জাতীয় ঠান্ডা পানীয় পান করলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

৩.তেলেভাজা খাবার খেলে এবং অধিক পরিমাণের তৈলাক্ত খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।  

৪.ধুমপান করলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

৫.রাতে খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে এই ক্ষেত্রে এসিড রিফ্লাক্স হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এই কারণে রাতে খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।

৬.পানি কম খেলে এই গ্যাসের সমস্যাটা অতিরিক্ত পরিমাণে দেখা দেয়।

৭. অনেক বেশি পরিমাণের মাংস খেলেও গ্যাসের  সমস্যাটি দেখা দেয়। এই সমস্ত কারণগুলোর জন্যই  গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটি দেখা দিয়ে থাকে।

গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণসমূহ

আমাদের দেহে যে গ্যাসের সমস্যাটি দেখা যাই, এই গ্যাসের অনেক লক্ষণ আছে লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:-

১,পেটে জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া।

২.বমি বমি ভাব হওয়া।

৩.পেটের বাম পাশের উপরিভাগে ব্যথা অনুভব হওয়।  

৪.পেট সব সময় ফেপে থাকা।

৫.অল্প খাবার খাওয়ার পরেও পেট পূর্ণ হয়ে গেছে মনে করা।

৬.মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে ওঠা।

৭.খাবারে অরুচি দেখা দেয়া,মূলত এই সমস্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই বুঝে নেবেন যে আপনি গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন গ্যাসে যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারাই জানেন যে গ্যাস কতটুকু ভয়ানক এবং কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তবে আপনাদের ভিতরে যদি কারো গ্যাসের সমস্যা থাকে আর এই লক্ষণ গুলো তাহলে অবশ্যই দেখা দেয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীওষুধ সেবন করুন এবং এই মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পান।

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে করণীয়। পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়

আমাদের শরীরকে আমরা যদি প্রতিদিন সুস্থ ও সবল রাখতে চাই এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হবে যেমন, প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে,  অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, নিয়মিত ও সময়মত খাবার খেতে হবে, অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত খালি পেটে পানি পান করতে হবে এবং ইসুব গুল ভিজানো পানি পান করতে হবে।

তাছাড়া অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে, এক দিনে বেশি মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খাওয়া যাবে, ধুমপান অ্যালকোহল এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে,রাতে খাবার খাওয়ার পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরে ঘুমাতে হবে, এবং প্রতি রাতে প্রতিনিয়ত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এই সমস্ত নিয়ম গুলো যদি আমরা মেনে চলি তাহলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাব এবং গ্যাস প্রতিরোধ করতে পারব।

গ্যাস্টিক হওয়ার প্রক্রিয়া

আমরা জানি যে আমাদের পেট থেকে প্রতিদিন হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষয় হয়। তাই যখন পাকস্থলী খালি থাকে তখন হাইডোক্লোরিক এসিড সমূহ ব্যবহৃত না হয়ে অধিক পরিমাণের জমা হয়ে যায়। কারণ হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কাজ হচ্ছে খাদ্য পরিপাককে সাহায্য করা। কিন্তু যখন পেটে কোন খাবার থাকে না অথবা খালি পেটে থাকেন তখন অতিরিক্ত এসিড পাকস্থলীতে জমা হয় এবং অতিরিক্ত এসিড জমা হওয়ার কারণে পাকস্থলীর ভিতরে ক্ষয় হওয়া শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে অন্ত্রের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে।

আবার পাকস্থলীর উপরের দিকে খাদ্যনালী তথা ইসোফেগাসের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এসিড যদি এই জায়গাকে আক্রান্ত করে তবে এই অবস্থাকে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বলা হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের বেশি বেশি ঢেকুর আসবে এবং রোগীর অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া করবে। এইগুলার মাধ্যমে মূলত আমাদের দেহে গ্যাস তৈরি হয়ে থাকে।

গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা

গ্যাস্ট্রিক রোগীর জন্য কিছু খাবার রয়েছে এই খাবারগুলো খেলে তাদের গ্যাস্টিকের সমস্যার অবনতি ঘটবে ও সুস্থ থাকবেন। গ্যাস প্রতিরোধ করার খাবারগুলো নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হলো:-

ডাবের পানি: ডাবের পানি  খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়, এই ডাবের পানি টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্বারা পরিপূর্ণ, এবং ডাবের পানিতে উপকারী মিনারেলস রয়েছে।

কলা: কলা খেলেও গ্যাসের সমস্যা কমবে, কলা হচ্ছে উপস্থিত ফাইবার সহায়ক, যে কোন গ্যাস্ট্রিক রোগের প্রতিদিন একটি থেকে দুইটি কলা খাওয়া প্রয়োজন।

রসুন: রসুন খুবই উপকারী একটি খাবার পরিপাকের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন সকালে এক কোয়া করে কাঁচা রসুন খালি পেটে খাবেন, এবং দুপুরের খাবারের সাথেও একোয়া করে রসুন বেটে খেতে পারেন। এই রসুনটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খাওয়াই যথেষ্ট।

দই: দই আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে।দই প্রতিদিন খেলে এটি আপনার হজম শক্তি সবল রাখতে সাহায্য করবে। দুপুরে খাবারের পরে অল্প টক দই খেতে পারেন। তবে তাতে চিনির বদলে অল্প বিট লবণ দিয়ে খেলে বেশি উপকারিতা পাবেন। এই চারটি খাবার গ্যাস্ট্রিক রোগীর জন্য খুবই উপকারী খাবার। এই খাবারগুলো যদি আপনারা প্রতিনিয়ত খান তাহলে আপনাদের শরীরে গ্যাসের সমস্যা কমে আসবে এবং আস্তে আস্তে গ্যাসের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবেন।

গ্যাস্টিক হলে কি কি খাওয়া যাবেনা

যে সমস্ত রোগীরা গ্যাস্ট্রিক রোগে ভোগেন তাদের খাওয়ার ক্ষেত্রে  অনেক নিয়মাবলী রয়েছে। যারা হজমে সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক এ ভুগছেন তাদের খুব বেশি ছোলা না খাওয়াই ভালো। এবং যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা বেশি পরিমাণের সবজি খাবেন না।

ছোলা কিন্তু আমাদের শরীরের প্রোটিনের  জন্য উপকারী একটি খাবার,তবে এই খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিবে, আবার কচুর তরকারি খেতে আপনারা অনেকেই হয়তো ভালোবাসেন এই কচুর তরকারিতেও অনেক গ্যাস রয়েছে, কচুর তরকারি খেলে অনেক বেশি পরিমাণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া মুলার তরকারি, মুলার তরকারিতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস রয়েছে এই খাবারটি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য খুবই ভয়ানক একটি খাবার,এই খাবারটি গ্যাসের সমস্যা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।

তাছাড়া রাজমা চাউল বা রাজমা দিয়ে পরোটা,রুটি, বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতেই তৈরি করে থাকেন, এই খাবারটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর এই খাবারেও প্রোটিনের মাত্রা ছোলার মতোই পাবেন, তবে আপনি যদি গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তবে এই খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটি রয়েছে তারা এই সমস্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এই খাবারগুলো হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের বাহক।

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়। গ্যাসের ব্যথা কোথায় হয়

গ্যাস্ট্রিক হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ব্যথা অথবা অন্যান্য সমস্যা অনুভব হতে থাকে তার ভিতরে রয়েছে, পেটের উপরের দিকে অল্প অল্প ব্যথা অনুভব হওয়া, বুকজলা অথবা বুকে ব্যথা হওয়া, পেটে জ্বালা পোড়া করা, এবং পেটের বাম পাশের উপরের দিকে ব্যথা অনুভব হওয়া, মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। গ্যাস্টিক হলে শরীরের এই সমস্ত জায়গা গুলোতেই ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা যায়।

গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় 

গ্যাসের ব্যথা খুবই তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের বুকের বাম দিকে মোচড় দিয়ে গ্যাসের ব্যথা হতে পারে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর পেটের উপরে ও বুকের ঠিক নিচেও গ্যাসের ব্যথা দেখা যায়। 

গ্যাসের ঔষধের নাম ও তার মূল্য। বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ

আমরা জানি যে বাংলাদেশে প্রায় ৮০% মানুষেরই গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। এই কারণে প্রত্যেকটি বাড়িতেই গ্যাসের ঔষধ থাকে। আজকে আমরা আমাদের এই পোস্ট থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধের নাম ও তার মূল্য কত সেটা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন আমরা জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের  নাম ও তার মূল্য গুলো,

ফিনিক্স ২০ এর মূল্য ৭টাকা।

সার্জেল ২০ এর মূল্য ৭টাকা।

সার্জেল ৪০এর মূল্য ১০ টাকা।

ম্যাক্সপ্রো ২০ এর মূল্য ৭ টাকা।

রাবিপ্রাজল এর মূল্য ৫টাকা।

সেকলো ২০ এর মূল্য ৬ টাকা।

ইসোটিড  ২০ এর মূল্য ৫ টাকা।

ওপি ২০ এর মূল্য ৫ টাকা।

এক্সিলক ২০ এর মূল্য ৫ টাকা।

লোসেকটি এর মূল্য ৫ টাকা।

রেনিটিডিল এর মূল্য ২ টাকা

তাছাড়া এইসব ট্যাবলেট গুলি গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ের ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী ঔষধ। এবার জেনে নেই গ্যাস্টিকের সিরাপ এর নাম ও তার মূল্য:-

➡️Flacol এটি স্কয়ার কোম্পানির একটি গ্যাস্টিকের সিরাপের নাম যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫ টাকা।

➡️Flatunil এটি একমি কোম্পানির একটি গ্যাস্ট্রিকের সিরাপের নাম যার বাজার মূল্য ৩৫ টাকা।

➡️lefoam এটি ইনসেপ্টা কোম্পানির একটি গ্যাসের সিরাপ এই সিরাপটির বাজার মূল্য ৩০ টাকা।

➡️ সিমেন, এটি এ সি আই কোম্পানির একটি গ্যাস্টিকের সিরাপের নাম এই সিরাপটির বাজার মূল্য ৪০ টাকা ।

➡️সিমেথি এটি জেনিত কোম্পানির একটি গ্যাসের ঔষধ এই সিরাপের বাজার মূল্য ৩০ টাকা।

➡️নিউ ড্রপ, এটি বেক্সিমকো কোম্পানির গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ এই সিরাপটির বাজার মূল্য ৩০ টাকা।

➡️গ্যাসনিল- এটি স্কাই এফ কোম্পানির একটি গ্যাসের সিরাপ, এই সিরাপটির বাজার মূল্য ৩০ টাকা। এইগুলা হলো গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ও সিরাপের নাম ও তার নির্ধারিত বাজার মূল্য। আমাদের শরীরে যদি  গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই ঔষধ গুলো খাবার খাওয়ার ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা আগে সেবন করবেন।তাহলে এই ওষুধের কার্যকারিতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায় ও গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তারপরও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।